Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১১ ১৪৩২

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৬ মে ২০২১
আপডেট: ১৬:৪৪, ৬ মে ২০২১

কেমন আছে পরিবার হারানো ছোট্ট মীম?

নানীর কোলে মীম

নানীর কোলে মীম

দাদির লাশ দেখতে যাওয়ার পথে পুরো পরিবারকে হারিয়েছে নয় বছরের মীম। ছলছল চোখে শুধু ‘মা, মা’ বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। তাকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে সব। 

মীম এখন খুলনার তেরখাদা উপজেলার পানতিতা গ্রামে নানা-নানির কাছে আছে। সব হারিয়ে নানীর কোলই তার একমাত্র ভরসা। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর একটু স্বাভাবিক হলে মানুষের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

সোমবার সকালে কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে পদ্মা নদীতে বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খায় মীমসহ ৩১ যাত্রী বহনকারী স্পিডবোটটি। এতে সব যাত্রী পানিতে পড়ে যান। এসময় মীম একটি ব্যাগ ধরে ভেসেছিল নদীতে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই।

মঙ্গলবার বাবা, মা ও দুই বোনের লাশ দাফন হয় দাদা বাড়ি একই উপজেলার পারোখালি গ্রামে। এরপর নানা-নানির সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করলে ওই দিন বিকালে পানতিতা গ্রামে চলে যায় মীম।

মীমের ফুফু রেবেকা বেগম বলেন, শুনেছি কারবালার ময়দানের কথা। সেই কারবালা আজ আমাদের বাড়িতে হচ্ছে।

মীমের নানা সবুর মিনা একজন কৃষক। অনেকটা ধরা গলায় বলেন, কোনো কিছুই ভাবতে পারছি না। মীমকে নিয়ে জীবনের বাকি সময়টা পার করে দিতে চাই। ওই এখন আমাদের সবার বেঁচে থাকার অবলম্বন।

এ ঘটনার পর বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে অনেকেই মীমের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মীমের জন্য ১ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া মীমের বিয়ের আগ পর্যন্ত আমরা তার ভরণ পোষণ দিবো বলে এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা দিয়েছি।

এছাড়া শিশু মীমের দায়িত্ব নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া। বুধবার (৫ মে) ভোরে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে বিষয়টি জানান এই আইনজীবী।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া লেখেন, ‘মীম এর থাকা-খাওয়া, জামা-কাপড়, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং সুন্দর মানসিক ও পুষ্টিকর শারীরিক বিকাশের জন্য যাবতীয় দায়িত্ব নেয়ার প্রাথমিক সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে সে তার নানা-নানির সাথে আছে। যেহেতু তারাই এখন তার গার্ডিয়ান, তাই এখনি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে তার নানা-নানির বয়স, আর্থিক সচ্ছলতা এবং তার সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া করছি। তেরখাজা উপজেলার ইএনও আবিদা সুলতানার সাথে কথা হয়েছে। তিনি শীঘ্রই অত্র এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এলাকার গণ্যমান্য বাক্তিদের সাথে পরামর্শক্রমে এই বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন জানিয়েছেন। অত্র এলাকার এমপি মহোদয়ের সাথে আজকে এই বিষয়ে কথা হবে। উদ্ধারকৃত শিবচর এলাকার মাননীয় এমপি লিটন চৌধুরী জানিয়েছেন আমি যদি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেই তাহলে তিনিও মীমকে দ্রুত ঢাকায় আনার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।’

উল্লেখ্য, ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন মনির শিকদার। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরে। রোববার রাত ৮টায় খুলনার তেরখাদার বাড়িতে মারা যান মনির শিকদারের মা। মায়ের মরদেহ দেখতে পরিবারের সবাইকে নিয়েই খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি।

সোমবার সকালে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা তাদের বহনকারী স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আইনিউজ/এসডিপি

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ