Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১১ ১৪৩২

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:১৮, ১৫ মে ২০২১
আপডেট: ০১:১৫, ১৬ মে ২০২১

উপবাসী ‘মাদক ব্যবসায়ীর মা’ মঞ্জু বেগম এবং একজন মানুষ এএসপি!

মঞ্জু বেগম ও এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম

মঞ্জু বেগম ও এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম

মানবিকতার অনন্য নজির রাখলেন চট্টগ্রামের এএসপি (রাউজান- রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।  সপ্তাহখানেক আগে যে মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে তিনি জেলে পাঠিয়েছিলেন, এবার ঈদের আগের রাতে (চাঁদ রাত) সেই মাদক ব্যবসায়ীর দুইদিনের উপোস বিধবা মায়ের কাছে ব্যাগভর্তি মাছ,মাংস, সেমাই, চিনি এবং পোলাওর চাল নিয়ে  হাজির হয়ে গেলেন তিনি।

একজন মাদক ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যের বিপদের মুহূর্তে ত্রাতার ভূমিকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা! অবিশ্বাস্য না? ঘটনাটি বৃহস্পতিবার রাতের। ঘটনাস্থল জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন রাইখালি গ্রাম।

ঘড়ির কাঁটা তখন ২টার ঘর পার হয়ে গেছে। দিনকয়েক আগে ৫০ লিটার মদসহ আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে থাকা মাদক ব্যবসায়ী রিয়াদ হোসেনের  বাড়িতে হাজির হয় সার্কেল এএসপিসহ ৮/১০ জনের পুলিশ দল। রিয়াদের মা বৃদ্ধা মঞ্জু বেগম প্রথমে দরজা খুলতে ইতস্তত করলেও পরে পুলিশ সদস্যদের সবার হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে তাজ্জব হয়ে যান। আড়াই কেজিরও বেশি ওজনের রুই মাছ, মুরগিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীতে ভরা ব্যাগ তার হাতে হস্তান্তর করে ফিরে যায় পুলিশ। তার আগে অসহায় মঞ্জু বেগমকে সান্ত্বনা দিয়ে তার সাথে কিছুক্ষণ কথাও বলেন এএসপি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিয়াদ হোসেন (২২) রায়খালি গ্রামের মৃত শামসুল আলমের পুত্র। এখন থেকে ৯ মাস পূর্বে হঠাৎ বাবার মৃত্যুর পর থেকে বিধবা মা মঞ্জু বেগমকে নিয়ে রিয়াদ রায়খালিরই একটি জরাজীর্ণ বাসায় ভাড়া থাকেন। পেশায় রিকশা চালক রিয়াদের আয়েই টেনেটুনে চলতো মা ছেলের দিন। কিন্তু গত ৫ মে মদসহ রিয়াদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্রকে হারিয়ে ঘোর অমানিশায় পড়ে যান বৃদ্ধা মঞ্জু। অনাহারে অর্ধাহারে কাটতে থাকে তার দিন। গত বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি রোজা রেখেছেন প্রায় সেহেরি ইফতার ছাড়াই। দিনের পর দিন উপোস করার প্রভাব শরীরের ওপরও পড়ে।

এদিকে বাকি পড়ে আছে যে জরাজীর্ণ ঘরে বাস করেন, সেটার কয়েক মাসের ভাড়াও। এমন অবস্থায় ঈদ- উৎসবের কথা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি বৃদ্ধা মঞ্জু। কিন্তু সার্কেল এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের মানবিকতায় ঈদ তো হলোই,  পাশাপাশি ব্যবস্থা হয়ে গেল সামনের আরো কিছু দিনের ক্ষুন্নিবৃত্তিরও।

এ প্রসঙ্গে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরেই আমরা আমাদের বেতন ও ঈদ বোনাসের টাকা থেকে সমাজের অভাবি মানুষদেরকে ঈদের বাজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এর ধারাবাহিকতায় চাঁদ রাতে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেঘুরে প্রকৃত অভাবি ও নিঃস্ব মানুষদের হাতে ঈদ বাজার তুলে দিয়েছি।'

মঞ্জু বেগমের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর অবস্থা শুনে আমাদেরও খারাপ লেগেছে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও তার পাশে থাকবে পুলিশ'।

বৃদ্ধা মঞ্জু বেগম কাঁদতে কাঁদতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, 'আমি ঈদের দিন যে কিছু রান্না করে খাব,সেই চিন্তাও করিনি। তবে আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছিলাম, আল্লাহ ব্যবস্থা করে দিয়েছে'।

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ