Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১০ ১৪৩২

এমডি মেহেদি হাসান

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১ জুলাই ২০২১
আপডেট: ২৩:৩২, ১ জুলাই ২০২১

বলা হয় নি বাবা অনেক কথা

যাদের বাবা নেই তারা কেবল জানেন বাবার অনুপস্থিতিটা কেমন। এক সময় বাবার বুদ্ধিছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যেতো না, আর আজ বাবাকে ছাড়া চলতে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত।

না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার বাবা। গাজীপুরের কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকায় ৩ জুলাই ২০১৭ ইং সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মাল্টিফ্যাবস কারখানায় ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণে নিহত হন। দেখতে দেখতে ৪ বছর পেরিয়ে গেল। সেদিনেই বুঝেছি বাবাকে হারানোর শোকটা কতটা কষ্টের। বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার।

সেই সময়টা মনে পড়লে দমবন্ধ হয়ে আসে। বাবাকে হারিয়ে আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। মাথার উপর থেকে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো এতোদিন যে মানুষটি আগলে রেখেছিল। মাঝে মাঝে এমন একটা সময় সবার জীবনেই আসে যখন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তখন কারো পরামর্শ খুব জরুরী হয়ে পড়ে । 

সে সময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো আদর্শ একজন মানুষ ছিলেন বাবা। স্বভাবগত গাম্ভীর্যের জন্য বাবার সাথে সবার ঘনিষ্ঠতা একটু কম থাকে। কিন্তু সে মানুষের আমাদের প্রতি ভালোবাসার কোন ঘাটতি থাকে না। একেকটা দিন বড় একা লাগে, বাবার স্পর্শটুকু, বাবার সেই মায়াভরা ডাক অথবা মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়া। বাবা থাকতে ভাবতাম, বাবা যদি না থাকেন, তবে আমি কিভাবে থাকবো! বাবা নেই আজ ৪ বছর, বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো এ কখনো কল্পনা করিনি, কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, মাস আর একেকটি বছর – বাবা নেই, আছে বাবার অনেকগুলো স্মৃতি, অনেকগুলো কথা, যা ভুলতে পারিনা, ভোলা যায়না।

জীবন চলার পথে সৎ ভাবে বেচে থাকার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু কোন দিন অসৎ কোন কাজে জড়িত ছিলেন না। সদাহাস্যমুখ মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আমার বাবা। বাবা শুধু একজন মানুষ নন, স্রেফ একটি সম্পর্কের নাম নয়। বাবার মধ্যে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়। যিনি তাঁর সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন।

পৃথিবীতে যাঁর বাবা নেই সে-ই বোঝে বাবার ভালোবাসা তার জন্য কতটা প্রয়োজন। মাঝিবিহীন নৌকা যেমন চালানো যায় না, তেমনি বাবা ছাড়া নিজের জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া অনেক কষ্টকর। আমার বাবা নেই। ২০১৭ সালে বাবা না–ফেরার দেশে চলে গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর ৪টি বছর অতিক্রম হয়ে গেছে ৷ অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। 

লিখতে বসলেই অজস্র স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি আমি। মাথার ভিতর তোলপাড় করছে ঘটনা প্রবাহ। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব ভেবে পাচ্ছিনা। তাই বোধহয় এই লেখাটিতে তোমায় কোন সম্ভাষণ জানাতে পারলাম না। কারণ, তোমাকে কোন সম্ভাষণে সম্ভাষিত করবো আমি বুঝতে পারছিনা। যাই করি না কেন তা তোমার জন্য অতি নগন্য হয়ে যাবে। আজ বাবাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিলো বাবার সাথে আমার অনেক কথা বলার ছিলো আমি বলতে পারিনি তাই মনের লুকানো কথাগুলো আজও কারো সাথে ভাগাভাগি করতে পারিনি। যাদের বাবা আছে তারা জানেনা বাবার ছায়াটা কতটা তার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ  বাবাহীন পৃথিবীটা বেশ অদ্ভুত! যাদের বাবা নেই তারা কেবল জানেন বাবার অনুপস্থিতিটা কেমন। এক সময় বাবার বুদ্ধিছাড়া কোন কাজেই সফল হওয়া যেতো না, আর আজ বাবাকে ছাড়া চলতে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত।

বুদ্ধিহীন অবস্থায় চলতে হচ্ছে এই অচেনা জীবন শহরতলীতে। কিন্তু বাবার সেই স্মৃতি বাবার সেই উপদেশমূলক কথাগুলো আজও আমার অন্তরকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়! বেশ কিছু আশা, স্বপ্ন, কাজ অপূর্ণ থেকে গেল আমার। বাবা, আজ তোমায় অনেক বেশি মনে পড়ছে। কখনো তোমাকে বলা হয়নি, ‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি, বাবা। এখনো ঘুমের মধ্যে বাবাকে স্বপ্নে দেখি। আশপাশের সবকিছুতেই যেন বাবার অস্তিত্ব খুঁজে পাই। মনে হয় বাবা আমার সঙ্গেই আছেন। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন ওপারে আমার বাবাকে ভালো রাখেন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

পৃথিবীর সব বাবাকেই জানাই অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

Green Tea
সারাবাংলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ