হেলাল আহমেদ
লাম্পি স্কিন রোগের চিকিৎসা

গরুর লাম্পি স্কিন রোগ বর্তমান দেশের গরু খামারী ও কৃষকদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম। ভাইরাসজনিত এই রোগটি দেশের অনেক জেলা, উপজেলায় শত শত গরুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা না পেয়ে অনেক জায়গায় মারা যাচ্ছে গরু। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন গরুর খামারীরা। যদিও প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পশু ডাক্তাররা বলছেন গ্রামের মানুষের ভুলভাল চিকিৎসার কারণে মারা যাচ্ছে গরু। সঠিক পরিচর্যায় এ রোগ থেকে গরু সেরে ওঠতে পারে।
আই নিউজের আজকের এই প্রতিবেদনে পাঠকদের গরুর লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো। সেই সঙ্গে থাকবে এই রোগে আক্রান্ত গরুর জন্য করণীয় কিছু নির্দেশনাবলী। তাই পুরো প্রতিবেদনটি পড়ুন।
এলএসডি বা লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত একটি গরু। ছবি- আই নিউজ
লাম্পি স্কিন ডিজিজ কী?
লাম্পি স্কিন রোগ নামে এটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেলেও এর মূল নাম লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি। এটি ভাইরাসবাহিত একটি চর্মরোগ। সাধারণত বাংলাদেশে বর্ষার সময় বা বসন্তের দিকে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এটি গরু ছাড়াও মহিষকেও আক্রান্ত করতে পারে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ খুব দ্রুত সময়ে ছড়ায়। অনেকটা করোনা ভাইরাসের মতো।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়ানোর কারণ
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়ানোর প্রধান কারণ আসলে অনেকগুলো। যেমন এক খামার থেকে অন্য খামারে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি এক দেশ থেকে অন্য দেশে গরু নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। গরু স্থানান্তরের মাধ্যমে অনেকদূর পর্যন্ত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর মশা, মাছির মাধ্যমে কাছাকাছি স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে মশা, মাছিগুলো পোষকের দেহ থেকে রক্ত পান করে তারাই এ রোগের জীবাণু বহন করে।
এলএসডি বা লাম্পি স্কিন ডিজিজে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বকনা বাছুর ও শংকর জাতের গরু। ছবি- আই নিউজ
তাছাড়া, এক এক এলাকায় একেক ধরনের বাহকের মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে। তবে এই রোগের ভাইরাসটি সাধারণত বাহকের শরীরে বংশবিস্তার করে না। সাধারণত কিছু মাছি মশা বা আঁঠালো এই ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে।
সাধারণত সরাসরি স্পর্শের কারণে এই রোগ ছড়ায় না। প্রাণী আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাস রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে তবে তা অল্প কয়েক দিন থাকে। কিন্তু কিছু কিছু প্রাণীতে এই রোগের সংক্রমণ মারাত্মক হলে এই অবস্থা দুই সপ্তাহ থাকতে পারে। যে সমস্ত প্রাণীর চামড়ায় ক্ষত দেখা যায় এবং নাক মুখ দিয়ে লালা ঝরে তার মাধ্যমে প্রাণীর সামনের খাবার এবং পানি সংক্রমিত হতে পারে।
অসুস্থ প্রাণীর শরীর থেকে যখন ফোসকাগুলো খসে পড়ে তখন সেখানে যে ভাইরাস থাকে তা নতুন করে রোগ তৈরি করার সামর্থ্য রাখে। অসুস্থ ষাড়ের বীর্যেও এই ভাইরাস থাকতে পারে। তাই এই ষাঁড় দিয়ে যদি প্রজনন করানো হয় তাহলে গাভীটিও আক্রান্ত হতে পারে। অসুস্থ গাভী থেকে দুধের মাধ্যমে অথবা ওলানের বাঁটের ক্ষতের মাধ্যমে দুধ খাওয়া বাছুরকে আক্রান্ত করতে পারে। এছাড়াও আক্রান্ত প্রাণীতে ব্যবহৃত নিডল (সুচ) যদি অন্য সুস্থ প্রাণীতে পুশ করা হয় সেক্ষেত্রেও এই রোগ ছড়ানোর একটা আশঙ্কা থাকে।
দেশি গরুর চেয়ে শংকর বা ক্রস জাতের গরু এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয়। ছবি- সংগৃহীত
লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ
এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণ গরুর শরীরে প্রবেশ করার চার থেকে সাত দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়-
- সাধারণত প্রথমে নাক এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে;
- শরীরের কিছু কিছু স্থানে লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে উঠে, যা সহজে অনুভব করা যায়;
- খুব বেশি জ্বর থাকতে পারে। যা টানা এক সপ্তাহও হতে পারে;
- দুগ্ধবতী গাভীর হঠাৎ করে দুধ উৎপাদন কমে যায়;
- তাছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুটি দেখা দেয়। এই গুটিগুলোর ব্যাসার্ধ ১০-১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই গুটির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। মুখে, গলায়, তলপেটে, ওলানে এবং পায়ে এই গুটি এবং ক্ষত বেশি দেখা যায়। এই গুটিগুলো ভেতরের দিকে প্রথমে চামড়া থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সাবকিউটেনিয়াস স্তরে এমনকি চামড়া নিচে মাংসপেশিতেও পৌঁছে যেতে পারে।
- মুখের বা নাকের ভেতরে যেই গুটিগুলো উঠে সেগুলো ফেটে গিয়ে ক্ষত হতে পারে। সেখানে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজও হতে পারে। এই সময় নাকমুখ দিয়ে তরল ঝরতে পারে। সাধারণত যে গুটি উঠে তার মাঝখানে ঘা হতে পারে, যা পরবর্তীতে খোসা আকারে উঠে আসে।
- চামড়ার এই গুটিগুলো অনেক সময় কয়েক মাসও থেকে যেতে পারে। মাঝে মধ্যে দুই চোখের কর্নিয়াতে ঘাঁ হতে পারে যাতে খুব ব্যথা থাকে।
- পায়ে বা হাঁটুতে যে ক্ষত হয় তা অনেক সময় ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়াল ইকফেকশনের কারণে চামড়ার নিচে গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে। যার ফলে পশু খোঁড়াতে শুরু করে।
লাম্পি স্কিন রোগ হলে করনীয়
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরা খুব ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে যেখানে। ফলে এলএসডি আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষতস্থানে খসে পড়া গুটির খোসায় এই ভাইরাসটি টিকে থাকতে পারে কয়েক মাস। তাই এলএসডি আক্রান্ত খামার, খামারে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি এবং নিযুক্ত লোকজনসহ সবকিছু ভালো করে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন।
এলএসডি ভাইরাসটি প্রায় সকল জীবাণুুনাশক এবং ডিটারজেন্টের প্রতি সংবেদনশীল। ভালোভাবে জীবাণুুমুক্ত করার জন্য খামারের গোবর, খড়কুটো আগেই সরিয়ে নিতে হবে।
লাম্পি স্কিন রোগের চিকিৎসা
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় এর সরাসরি কোন চিকিৎসা নেই। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করার জন্য লক্ষণ দেখে চিকিৎসা প্রয়োগ করা যায়। এই ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
লাম্পি স্কিন ডিজিজে জ্বর এবং গায়ে ব্যথা থাকলে কিটোপ্রোপেন বা প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশকগুলো ব্যবহার করা যাতে পারে। রোগ খুব তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।
গুটিগুলো ফেটে গেলে পটাশ বা আয়োডিন সলিউশন দিয়ে ক্ষতস্থান ধুতে হবে নিয়মিত। তাছাড়া ঘা হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের সালফার পাউডার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষত স্থানে ব্যবহার করতে হবে।
আই নিউজ/এইচএ
- কাল থেকে যেসব শাখায় পাওয়া যাবে নতুন টাকার নোট
- 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' গঠনের ঘোষণা
- এক বছরেই শক্তি, ক্ষিপ্রতা জৌলুস হারিয়ে 'হীরা' এখন বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী
- ওয়াহিদ সরদার: গাছ বাঁচাতে লড়ে যাওয়া এক সৈনিক
- ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিকথা (প্রথম পর্ব)
- এবার ভাইরাস বিরোধী মাস্ক বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ
- মায়েরখাবারের জন্য ভিক্ষা করছে শিশু
- ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- ঈদে মিলাদুন্নবী ২০২৩ কত তারিখ
- তালিকা হবে রাজাকারদের